news | logo

৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং



ফরিদপুরের ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে ঘুষ দিলেই মেলে অবৈধ লাইসেন্স

প্রকাশিত : জুলাই ১৩, ২০১৯, ১৬:১২

ফরিদপুরের ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে ঘুষ দিলেই মেলে অবৈধ লাইসেন্স

ফার্মাসিস্ট পাশ করা যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষিত ব্যক্তিদের ওষধ বিক্রির লাইসেন্স দেওয়ার কথা থাকলেও ফরিদপুরে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে শতাধিক অবৈধ লাইসেন্স দিয়েছে ড্রাগ সুপার সুলতানা রিফাত ফেরদৌস।

আর তার এই কাজের মূল ভূমিকায় থাকেন অফিস সহকারী শরীফ। অফিসের শরীফই লাইসেন্স প্রত্যাশীদের সাথে সব রকম দর-দাম মেটান। আশানুরূপ টাকার অংক মিলে গেলেই লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেন ড্রাগ সুপার।

এমন লাইসেন্স প্রদানের ফলে পড়া-লেখা না জানা ব্যক্তি ও রোগীদের নিয়ে ব্যবসা করা একটি কুচক্রের কাছে মানুষের জীবন-মরনের গুরুত্বপূর্ন বিষয় ওষধের ব্যবসা করার সুযোগ মিলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে শহর গ্রামের এমন অনেক দোকানের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছেন।

শহর গ্রামের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠছে একের পর এক ওষধের দোকান। এসব দোকানে সার্বক্ষনিক একজন ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ দোকনেই ফার্মাসিস্ট নেই। ড্রাগ সুপার মাঝে মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ন ওষধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিলেও ফার্মাসিস্ট থাকা না থাকা বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেন না।

শুধু ফরিদপুর জেলায় ২০৩৯টি ড্রাগ লাইসেন্স ইস্যু করা আছে। যার মধ্যে ফরিদপুর সদরে রয়েছে ৭০৯টি। এদের মধ্যে ঘুষের বিনিময়ে হওয়া লাইসেন্স গুলোর কিছু নমুনা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে যে সব লাইসেন্স টাকার বিনিময়ে হয়েছে সেসব দোকানের মালিকেরা ফার্মাসিস্ট নয়। তারা ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে অন্য কারো নামে লাইসেন্স করে তা গোপনে ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে নিজের করে নিয়েছে।

এভাবেই চলছে অধিকাংশ ওষধের দোকানের ব্যবসা। এর বাইরে ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে শরীফের সাথে যোগাযোগ করলে ড্রাগ লাইসেন্স সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার সমাধান করে থাকেন তিনি। তাই ফরিদপুরের ভূক্তভোগী সচেতন মহল দ্রুত অবৈধ লাইসেন্সধারীদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।

বিষয়টি নিয়ে জেলার সতেচন নাগরিক নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, সমাজের সচেতন মানুষ হয়তো দোকান থেকে তার ওষধটি বুঝে আনতে পারেন। কিন্তু সুবিধা বঞ্চিত কম পড়ালেখা জানা মানুষ গুলো অসাধু ওষধ ব্যবসায়ীদের হাতে প্রতারনার শিকার হচ্ছেন। তাই সরকারি বিধি অনুযায়ী শিক্ষিত ও প্রকৃত ফার্মাসিস্টদের ছাড়া ওষদের দোকান যেন করতে না পারে সেদিকে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

তিনি বলেন, অনেক সময় ছোট খাট অসুখের জন্য সাধারন মানুষ ডাক্তার না দেখিয়ে ওষধের দোকান থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। একজন ফার্মাসিস্ট দোকানে না থাকলে এসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপত্তি ঘটতে পারে।

ফরিদপুর ড্রাগ এন্ড কেমিষ্ট সমিতির সাধারন সম্পাদক সঞ্জিবন সাহা আকাশ বলেন, সামন্য একটু ভুলে মানুষের জীবন চলে যেতে পারে। ওষধের মতো গুরুত্বপূর্ন ব্যবসা যার তার হাতে দিলে তা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য খারাপ হবে। প্রকৃত ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষধ ব্যবসা করার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে কোন লাইসেন্স দিয়ে থাকলে আমরা ত খতিয়ে দেখে কেন্দ্রে জানাবো।

ফরিদপুর ড্রাগ এন্ড কেমিষ্ট সমিতির সহ-সভাপতি মাজাহারুল আলম চঞ্চল বলেন, ওষধের সহজ প্রাপ্যতা দরকার আছে। তবে সেটা নিয়মানুযায়ী হতে হবে। ওষধ খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয়। এই বিষয়ে যার কোন জ্ঞান নেই সেধরনের লোক ব্যবসায় প্রবেশ করলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ঝুকির মধ্যে পড়বে।

ফরিদপুরের ড্রাগ সুপার সুলতানা রিফাত ফেরদৌস তার বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন টাকা পয়সা নিয়ে লাইসেন্স দেই নাই। তবে অফিসের কেউ এমন কাজে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফার্মাসিস্ট না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, জেলায় ২০৩৯টি লাইসেন্স রয়েছে। এরমধ্যে অনেকে ফার্মাসিস্ট আবার অনেক দোকানে ফার্মাসিস্ট নেই। তারা অন্য কোন ফার্মাসিস্টর সাথে যোথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আমাদের লোকবল সংকট থাকায় সব সময় সব বিষয়ে তদারকির সুযোগ হয় না।

প্রসঙ্গত, সুলতানা রিফাত ২০১৩ সালে ফরিদপুরে ড্রাগ সুপার পদে যোগদান করেন। সে সময় তিনি গোপালগঞ্জ জেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ৮ বছর ফরিদপুর ড্রাগ সুপার হিসেবে রয়েছেন তিনি। এরমধ্যে দুদফায় ৬ মাস করে তিনি ফরিদপুরে ছিলেন না। বর্তমানে ফরিদপুর জেলার পাশাপাশি তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রাজবাড়ী জেলার দায়িত্ব পালন করছেন।




সম্পাদক ও প্রকাশক : মি. আহমেদ

অফিস লোকেশন:

১১০, গোয়ালবাড়ী, কাফরুল

মিরপুর-১৪, ঢাকা-১২০৬।

ফোন: ০১৯২২২৭৭৭৪৭ নিউজরুম: ০১৯২২২৭৭৭৩২

ই-মেইল: sales@bdwebs.com