news | logo

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে মে, ২০২৪ ইং



প্রভু! ক্ষমা করো, সত্য ভাষণ-11.08.2019

প্রকাশিত : আগস্ট ১১, ২০১৯, ১২:২৭

প্রভু! ক্ষমা করো, সত্য ভাষণ-11.08.2019

মোহাম্মদ আহাদুজ্জামান মিঞা

গৌতম বাবুর একমাত্র আদরের সন্তান মঙ্গল। লেখাপড়ায় সারা জীবনই নিচের থেকে ফার্স্ট । অর্থাৎ পৌণে একশত ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে রোল নম্বর পঁচাত্তর । জীবনে কোনদিন পাশ করে ক্লাসে উঠেনি। ছাত্রের লজ্জায় কান্নাকাটি ও অভিভাবক গৌতম বাবুর অনুরোধে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতি বছরই উপরের ক্লাশে পড়ার সুযোগ করে দেন। এবারও মঙ্গলের ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেছে। ক্লাস ফাইভ থেকে ছিক্সে যাবে । হাইস্কুলে পড়বে। মনে অনেক উদ্যোম আকাঙ্খা। পরীক্ষা চলাকালীন কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করেছিলো কিরে মঙ্গল পরীক্ষা কেমন হচ্ছে? মঙ্গল স্বহাস্য সংক্ষিপ্ত উত্তরে ভালো। কেউ আবার দুষ্টুমির ছলে বলে তা পরীক্ষায় কি ফাস্ট সেকেন্ড হতে পারবি? মঙ্গলের উত্তর হুঁ। ফাস্ট না হতে পারি সেকেন্ড ক্লাস নেয় কে? পরীক্ষার ফলাফলের দিন তারিখ ঘনিয়ে এলো। মঙ্গলের উৎকন্ঠাও বাড়তে থাকে। ঐ মহেন্দ্রক্ষন টি এগিয়ে এলো। মঙ্গল স্কুলে গেল ফলাফল জানতে। মঙ্গল অনেক দেরি করে বাড়িতে ফিরলো। মঙ্গলের কন্ঠে রাশব্দটি নেই। দুই আখিঁ দিয়ে অশ্রু নির্গত হচ্ছে । বাড়ির পাশে কাছারী ঘরে আরাম কেদারায় বসে কাঁদছে।

ব্যবসায়ী বাবা বাড়ী ফিরে আগ্রহ চিত্তে জিজ্ঞাসা করলেন “কিরে মঙ্গল কাঁদছিস কেন? তোর রিজাল্ট আজকে দেয় নি? মঙ্গল মাথা নেড়ে জবাব দেয় হ্যাঁ দিয়েছে। বাবা আবার জিজ্ঞাসা করে তুই কাঁদছিস পাশ করিস নি? মঙ্গল জবাব দেয় না! বাবা আবার বলেন তবে তুই ফেল করছিস? মঙ্গল আবার ও সংক্ষিপ্ত জবাব দেয় না! মঙ্গলের বাবা গৌতম বাবু এবার ক্ষীপ্ত হয়ে প্রশ্ন করেন পাশ ও করিস নি, আবার ফেল ও করিস নি! তবে হাউ হাউ করে কাঁদছিস কেন? মঙ্গল এবার মাথা নিচু করে গলার ভলিউম কমিয়ে দিয়ে জবাব দেয় আমাকে এক ক্লাশ নামিয়ে দেছে”।

সুপ্রিয় পাঠক! মঙ্গলের গল্প আপাততঃ শেষ। আমাদের সমাজে মঙ্গলের প্রেতাত্না ভর করেছে। আমাদের বৃহৎ স্বার্থে আমাদেরই এর প্রতিকারে এগিয়ে আসতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত অনেক কিছুই হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর আগে দেশের বিশিষ্ট্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী শিল্পপতি সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলামের অর্থানুকুলে বোয়ালমারীতে স্থাপিত হয় কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ। বরাবরই মহিলা কলেজটির ফলাফল ভালো ছিলো। যে কারণে দূরদুরান্ত থেকে মেয়েরা আসতো এখানে ভর্তি হতে, পড়তে।
এ বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ফলাফল ভয়ানক খারাপ। মহিলা কলেজ থেকে একজনও জিপিএ ৫ পায়নি। শুধু তাই নয়। এ কলেজ থেকে এ বছর পাশের চাইতে ফেল করেছে বেশি।
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলাফল ভালো করার একটা প্রতিযোগিতা থাকে। কে কার চাইতে ভালো ফলাফল করতে পারে। কিন্তু আমরা তার থেকে যোজন যোজন দূরে। এর অবশ্য কারণও আছে। মানুষ যখন প্রত্যাশার চাইতে বেশী পেয়ে যায় তখন তার প্রতি মায়া, খেয়াল বা কর্তব্য কিছুই থাকে না। আমরা পাবদা চাইতেই বোয়াল, চাপিলা চাওয়ার আগেই ইলিশ পেয়ে গেছি। যে কারণে কলেজটির গুরুত্ব অনুভব করতে পারিনি। শুনেছি অধ্যক্ষকে নিয়ে প্রচন্ড অসন্তোষ। পরিচালনা পর্ষদ তাদের দায়িত্ব পালন করছেনা ঠিক মতো। শিক্ষক মন্ডলী তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে অলস। দায়িত্বহীন ও আন্তরিকতা বিবর্জিত।

প্রতিষ্ঠাতা তার প্রতিষ্ঠানের প্রতি সুনজর দেন ন; না হয় দেবার মতো সময় পান না। সবচেয়ে বড়ো কথা কাজী সিরাজুল ইসলাম যে সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা নিয়ে এই বিরাট অর্থ ব্যয় করছিলেন আমরা স্থানীয় জনগন বা স্বার্থভোগীরা তার প্রতি সুবিচার করিনি। আমরা প্রতিটি নির্বাচনে তার প্রতি সহানুভুতির হাত বাড়িয়ে দেয়া তো দূরের কথা বিরোধীতা করেছি সব সময়। এমন কি তাকে তার নির্বাচনী মিটিং ও সঠিক ভাবে করতে দেইনি।
শিক্ষক ও ছাত্রীর সম্পর্ক হতে হবে বাবা ও সন্তানের মতো। কিন্তু সম্পর্ক বিরাজ করে অঘোষিত ব্যবসায়ী ও ভোক্তার মতো। মূলত: শিক্ষকরা প্রাইভেট কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। যে ছাত্রী প্রাইভেট পড়বে সে ছাত্রী ততোটা প্রিয়।

অভিভাবকরা সন্তানকে কলেজে পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করে বসে থাকে। কারন স্বরুপ বলা যেতে পারে যে মেয়েরা কলেজে লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হয়েছে তাদের শতকরা পঁচানব্বই জনের বাবারা কলেজের মুখ চোখে দেখেনি। বাবারা যদি জানতেন তার সন্তান কাপড় চোপড় ও কসমেটিক্রের দোকানে কতটা সময় ব্যয় করে তা হলে ঐ সন্তানের নসীবে হয় তো কলেজে পড়া দূরের কথা ভর্তি হওয়া ও সম্ভাব হতো না।
ছাত্রীদের চরম ভাবে শেষ করে দিয়েছে এ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন নামক মরণ ব্যাধি ক্যানসার। এর থেকে পরিত্রাণের নেই কোন এ্যানছার!

এই মহিলা কলেজের এক আধজন বাদে এমন কোনো ছাত্রী নেই যার এক বা একাধীক স্মার্টফোন না আছে। ফেসবুক ব্যবহার করে এক বা একাধিক আইডি। একটা পরিসংখ্যানে জানা গেছে শতকরা চল্লিশটি আইডি ভূয়া। ছেলেরা মেয়ে সেজে অভিনয় করে যায়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বিনিময় হয় ধ্বংশ হয়ে যাবার সব উপাচার উপকরণ। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যেমন উঠতি বয়সের ছেলেরা “ব্লহোয়েল” নামক মরণ খেলায় মেতে আতহুতি দিয়েছে, তেমনি এ সব ছাত্রীরা ফেসবুক নামক মরণ নেশায় মেতেছে।
বাবা মায়েরা আদরের সন্তান কে কলেজে পাঠিয়েই খালাস। কিন্তু তারা জানে না আদরের কন্যাগণ ধ্বংশকূপের কিনারা পার হয়ে গিয়ে তলানিয়ে গিয়ে ঠেকেছে। আমার এক পরিচিতি লোকের (নামটা উহ্য রাখলাম) ঢাকার ফার্মগেটে দুইটা হোস্টেল ছিলো। একটা হোস্টেলে চারটা রুম দিয়েছিল মেয়েদের ভাড়া হিসেবে। ছয় সাত মাসের মাথায় তাদের বের করে দিতে বাধ্য হয়েছিলো। কারণ ঐ কলেজ পড়–য়া মেয়েরা ধুমপান, সীসা, ফেনসিডিল, ফেসবুকে এতোটাই আসক্ত হয়ে পড়েছিলো যে তাদের হোস্টেলে আর রাখা সম্ভব হয় নি। তাদরে নেশার হিংস্রতা এতোটাই তীব্র হয়েছিলো বিছানায় আগুন লাগানো থেকে রুমের টিভি ভাঙ্গা ছিলো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
দুর্ভাগ্য হাতছানি দিয়ে ডাকা বাবা মায়েরা একবার ও কি ভেবেছেন কষ্টকরে যে দামী স্মার্ট ফোনটি মেয়েকে কিনে দিয়েছেন তা দিয়ে মেয়েটা কি করছে? অথবা আপনার মেয়ের হাতের দামী স্মাট ফোন পেলো কোথায় যা আপনি কিনে দেন নি। প্রশ্ন করার হয় সাহস পাননি, না হয় প্রয়োজন মনে করেন নি। এই প্রশ্ন না করার জন্য মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখিন আপনিই হয়েছেন। আপনি জানেন আপনার আদরের মেয়ের কোনটি সার্বক্ষণিক সাইলেন্ট করা কেন। অধিকাংশ সময় নীরবে নির্জনে একা থাকে কেনো। তার শোবার ঘরে অন্য কাউকে রাখতে চায় না কেনো। কানে অধিকাংশ সময় এয়ারফোন ঢুকানো কেনো? আসলে বিপদ কখনই ঘন্টা বাজিয়ে ফায়ার সার্ভিস অথবা এ্যাম্বুলেন্সের মতো আসেনা। একটা ঘরে আগুন লাগাতে মশালের আগুন লাগেনা।একটা দেয়াশলাইয়ের কাঠির আগুনই যথেষ্ট। আপনি অশিক্ষিত বাবা তাই জানেন না আপনার ঐ আদরের শিশু কন্যাটি কতোটাই ইচড়ে পাকা পেকেছে।
যার একটা টাচফোন আছে, তার অবশ্যই একটা ফেসবুক আইডি আছে। কমপক্ষে তার দুই হাজার ফেসবুক ফ্রেন্ড আছে। মেয়েদের আইডি দেখলে পুংটা ছেলেরা হন্যে হয়ে পড়ে বন্ধু বানানোর ইচ্ছায়। একবার অনুরোধে আঙ্গুলের ছোয়া লাগলেই বন্ধু হয়ে গেলো। শুরু হলো প্রথমে নরম পরে সব গরম আদান প্রদান।

বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে সারা রাত দিন আদান প্রদান চলে নোংরা নীল ছবি । পৃথিবীর যে কোন স্থানে একটি ভিডিও বা ছবি পাঠাতে সময় লাগে মাত্র দুই সেকেন্ড। রাতভর চলে মহাউৎসব। বাবা মা মেসেজ বা ফোন কলের শব্দ বুঝতে না পারে সে জন্য ফোন সাইলেন্ট করে রাখা হয়। এয়ারফোনে কথা বলে ফিস ফিস করে ফোনটাকে দূরে সরিয়ে রেখে। যাতে বাবা মা নামক জঞ্জাল গুলো টের না পায় কিছু। মা ভাবেন আহারে আদরের মেয়েটা সারারাত জেগে কষ্ট করে পড়ছে এক গ্লাস দুধ খাইয়ে আসি। মেয়ে যে রাত ভর অন্যকে দুধ খাইয়ে খাইয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে মা তা জানেন না!
আমি আমাদের গ্রামের একটা মেয়েকে চিনি। তার বাবা এক সময় রিক্সা চালাতো। বর্তম নে কৃষিকাজ করে। তার অতি আদরের বড়ো মেয়েটি মহিলা কলেজের ছাত্রী। গতবার পরীক্ষা দিয়েছিলো দুই বিষয়ে ফেল। এবার ও কম্পার্টমেন্টাল দিয়েছিলো। ভাগ্যদেবী সুনজর দেননি।
কেউ জিজ্ঞাসা করলে সত্য কথা বলতে পারছেনা । বলছে পাশ করেছি এ মাইনাস। আমি তাকে পরীক্ষা নিয়েছি। যে কোনো সহজ তিনটি লাইন বাংলায় নির্ভুল ভাবে লিখতে পারে না। তার হাতে একটা স্মার্টফোন। বাবা কিনে দেয়নি। ফোনের ব্যাপারে এতোটা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বোয়ালমারীর যে কোন ফোনের মেকারকে হার মানাতে পারে। এলাকার অধিকাংশ মেয়েদের ফেসবুক একাউন্ট তার খুলে দেয়া। এই যদি হয় নিম্নবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ের ফোনের ব্যাপারে ক্যারিশমা তা হলে বোয়ালমারী মহিলা কলেজের ফলাফল ভালো আশা করবো কি ভাবে?

মহিলা কলেজের ছাত্রীদের লেখাপড়ার চাইতে অন্য দুনিয়ায় নজর বেশি। শিক্ষকদের পাঠ দানে অনিহা। অধ্যক্ষের প্রতি আস্থার অভাব। পরিচালনা পর্ষদ অকার্যকর। অভিভাবকবৃন্দ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কাদিরদী কলেজে লেখাপড়া খারাপ হবার কারণে এক সময় ছাত্র ছাত্রী ঐ কলেজে ভর্তি হতে চাইতো না। এ বছর অনন্য আসাধারণ ফলাফল করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। আগামীর প্রত্যাশা’র তরফ থেকে অভিনন্দন কলেজ কর্তৃপক্ষকে। কাজী সিরাজুল মহিলা কলেজের ফলাফল যদি ক্রমন্বয়ে নিম্নমুখি হতেই থাকে তা হলে আমার গল্পের মদনের মতো এক ক্লাশ নামানোর মতো কলেজের সরকারী অনুদান বন্ধ হয়ে গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবেনা। -মোবাইল: ০১৭১৯০৮৬০৫৯




সম্পাদক ও প্রকাশক : মি. আহমেদ

অফিস লোকেশন:

১১০, গোয়ালবাড়ী, কাফরুল

মিরপুর-১৪, ঢাকা-১২০৬।

ফোন: ০১৯২২২৭৭৭৪৭ নিউজরুম: ০১৯২২২৭৭৭৩২

ই-মেইল: sales@bdwebs.com