ফরিদপুর অফিসঃ

ফরিদপুরে আকলিমা বেগম সোনিয়া (৩০) নামে এক নারীকে হত্যার সাথে জড়িত আরো এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব । মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ভোররাতে শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তির নাম আনিস শেখ (২৩)। সে রাজবাড়ির কালুখালি উপজেলার মোহনপুর গ্রামের জনৈক কুদ্দুস শেখের ছেলে।

এনিয়ে সোনিয়া হত্যাকান্ডে জড়িত দু’জনকে আটক করলো র‌্যাব। এর আগে চাঞ্চল্যকর এই ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে জড়িত কালুখালীর পশ্চিম রতনদিয়া গ্রামের জনৈক তাইজুল দেওয়ানের ছেলে রাসেল দেওয়ান (১৫) কে আটক করা হয়।

জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর সকালে ফরিদপুরের সদর উপজেলার সিএন্ডবি ঘাটের পাশে সজনী রায়ের ডাঙ্গিতে রাস্তার পাশে সোনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সোনিয়া সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের জমাদ্দারডাঙ্গি গ্রামের আব্দুল ওহাব শেখের মেয়ে। ওই ঘটনায় সোনিয়ার পরিবার অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

র‌্যাব-৮, সিপিসি-২ এর কোম্পানী অধিনায়ক মেজর শেখ নাজমুল হাসান পরাগ জানান, ক্লুলেস এই হত্যাকান্ডের ছায়া তদন্ত চালায় র‌্যাব। তদন্তের এক পর্যায়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাসেলকে আটক করা হয়। পরে আদালতে রাসেল হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারেক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। এই ঘটনার সাথে আনিস ও সালাম নামে আরো দু’জন জড়িত থাকার কথা জানায় সে।

র‌্যাবের অধিনায়ক জানান, রাসেলের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে আনিস ও সালামকে আটকের চেষ্টা চালানো হয়। এরপর মঙ্গলবার ভোররাতে আনিসকে আটক করতে সক্ষম হন তারা। আটক আনিস জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয় বলে তিনি জানান।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আনিস জানায়, কালুখালির সালামের সাথে নিহত সোনিয়ার বিয়ে হয়েছিলো। ১০ বছর ঘর সংসার করার পর সালাম ও সোনিয়ার মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। আনিসের সাথে সালামের পূর্ব পরিচিতি ছিলো। সেই সুবাদে সালামের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর সোনিয়ার সাথে আনিসের মোবাইলে একটি যোগাযোগ গড়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে সালাম ক্ষুব্ধ ছিলো।

আনিস জানায়, এ অবস্থায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর সোনিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তাকে (আনিসকে) দিয়ে সোনিয়াকে টোপ দিয়ে ডেকে আনা হয় ওই দিন সন্ধায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মাইক্রোবাসযোগে শিবরামপুর এলাকা থেকে সোনিয়াকে গাড়িতে তুলে নেয়। এসময় সালাম গাড়ির পেছনে সিট ও ডালার ফাঁকে লুকিয়ে ছিলো। সোনিয়া গাড়িতে ওঠার পর আনিস চলন্ত গাড়ির মধ্যেই তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সালাম লুকানো স্থান হতে বের হয়ে আকলিমার উপর চড়াও হয়ে তাকে কিল, ঘুষি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর সোনিয়ার লাশ নিয়েই তারা বিভিনś সড়ক দিয়ে ঘুরে সিএন্ডবি ঘাটের ওই এলাকায় এসে রাস্তার পাশে লাশটি ফেলে পালিয়ে যায়।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আনিস আরো জানায়, সোনিয়ার লাশ ফেলে তারা মাইক্রোবাস চালিয়ে কালুখালী ফিরে যায়। সেখানে তিনজনে মিলে একটি পেট্রোল পাম্প হতে গাড়ির তেল নিয়ে আনিসের বাড়ির সামনে নদীর তীরে যায়। নদীর পানিতে গাড়ি ভালভাবে ধুয়ে পরিস্কার করে সোনিয়ার মোবাইল ফোন ও ভ্যানিটি ব্যাগ তারা নদীতে ফেলে দেয়। এরপর গভীর রাতে গাড়ির মালিককে গাড়ি বুঝিয়ে দিয়ে যে যার মতো বাড়িতে ফিরে যায়।