র্যাগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ পরিচয়পর্ব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরোনো শিক্ষার্থীদের সখ্য গড়ে তোলার জন্য যে আনুষ্ঠানিক পরিচিতি প্রথা সেটাকেই র্যাগিং বলে অভিহিত করা হয়। এটি আসলে গ্রিক কালচার। সপ্তম-অষ্টম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিরিট নিয়ে আসার জন্য র্যাগিংয়ের প্রচলন শুরু হয়।
র্যাগ শব্দটি মূলত ইংরেজি র্যাগিং থেকেই এসেছে। ইউরোপে র্যাগিয়ের প্রচলন ঘটে অষ্টম শতকের মাঝামাঝি। ১৮২৮ থেকে ১৮৪৫ সালের দিকে র্যাগ সপ্তাহের প্রচলন ঘটে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ইউরোপ-আমেরিকায় এর যাত্রা হলেও বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশেই এর ব্যবহার সর্বাধিক। এ উপমহাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র্যাগিং শুরু হয় ষাটের দশকে। এরপর আশির দশকের শেষ দিকে তা ভারতে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র্যাগিংয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পায় নব্বইয়ের দশকে।
র্যাগিং একটি অমানবিক প্রথা
বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রসিকতার ছলে র্যাগিংয়ের নামে যে প্রথা চলছে, তা এককথায় টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতনের মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ক্যাম্পাসে প্রথম পা রেখেই র্যাগিং নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নবীন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, জাহাঙ্গীরনগর, শাহজালাল এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যলয়ে এ অবস্থা চরম নাজুক। এ নির্যাতনে পিছিয়ে নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত সরকারি কলেজগুলোও।
র্যাগিংয়ের মাধ্যমে নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যেমন কান ধরে ওঠবস করানো, রড দিয়ে পেটানো, পানিতে চুবানো, উঁচু ভবন থেকে লাফ দেওয়ানো, সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়া, গাছে উঠানো, ভবনের কার্নিশ দিয়ে হাঁটানো, মুরগি হয়ে বসিয়ে রাখা, ব্যাঙ দৌড়ে বাধ্য করা, সিগারেট-গাঁজা-মদ্যপানে বাধ্য করা, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করানো, সবার সম্মুখে নগ্ন করে নাচানো, যৌন অভিনয়ে বাধ্য করা, ছেলেমেয়ে হাত ধরা বা জোর করে আলিঙ্গন করতে বাধ্য করা, অপরিচিত মেয়ে অথবা ছেলেকে প্রকাশ্যে প্রেমের প্রস্তাব দিতে বাধ্য করা, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে যৌন হয়রানি করা, দিগম্বর করা, ম্যাচের কাঠি দিয়ে রুম অথবা মাঠের মাপ নেওয়া, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মাপ নেওয়া, শীতের মধ্যে পানিতে নামিয়ে নির্যাতন করা, পুরোনো শিক্ষার্থীদের থুতু মাটিতে ফেলে নতুনদের তা চাটতে বলা, বড় ভাইদের পা ধরে সালাম করা, গালাগাল করা, নজরদারি করা, নিয়মিত খবরদারি করা ইত্যাদি।
র্যাগিং হচ্ছে একজন অনভিজ্ঞ ছাত্রকে ভিতু ও হীনমন্য করে তোলার অপপ্রয়াস। র্যাগিংয়ের মতো অমানবিক আচরণের কারণে অন্যের প্রতি ঘৃণা ও অবজ্ঞার সৃষ্টি হয়, যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পরিবেশকে অনিরাপদ করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, র্যাগিংয়ের মতো অপদস্থ ও নির্যাতনমূলক আচরণে অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে অনেকে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে। তাছাড়া আজ যে শিক্ষার্থী র্যগিংয়ের শিকার হচ্ছে, সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আগামীতে এর চেয়ে বেশি মাত্রায় র্যাগিং করার পরিকল্পনা করবে এবং নতুন ছাত্রছাত্রীরা আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের ওপর চড়াও হবে- এটাই স্বাভাবিক। ফলে এ অপসংস্কৃতি দিন দিন বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
র্যাগিং মুমিনের কাজ নয়
ইসলামের সঠিক শিক্ষার অভাবে ও নৈতিকতার পতনের কারণে র্যাগিংয়ের মতো একটি অনৈসলামিক প্রথা ব্যাপকতা লাভ করেছে। ছোট ও নবীনের প্রতি আগ্রাসী ও নিষ্ঠুর আচরণ এবং প্রভুত্বের মনোভাব কোনোভাবেই ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। বড়র কাছে ছোটর প্রাপ্য স্নেহ ও ভালোবাসা। আর ছোটর কাছে বড়র প্রাপ্য শ্রদ্ধা ও মান্যতা। ইসলাম মানুষকে এ শিক্ষাই প্রদান করে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না, আমাদের বড়কে শ্রদ্ধা করে না।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯১৯)
কাজেই মানবসমাজে ছোট-বড়র মাঝে স্নেহ-ভালোবাসা এবং ভক্তি-শ্রদ্ধার সম্পর্কই বাঞ্ছনীয়। নতুন কোনো জায়গায় বা প্রতিষ্ঠানে যারা আসে তারা সংকোচ, নিঃসঙ্গতা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকে। এ অবস্থায় প্রয়োজন পুরোনোদের সহযোগিতাপূর্ণ দয়ার্দ্র আচরণ। এর পরিবর্তে ঠাট্টা-বিদ্রুপের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করা নিঃসন্দেহে নির্দয়তা ও অমানবিকতা। এটা কোনো মুসলমানের কাজ নয়। ইসলামে মুসলমানের যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে, তা হচ্ছে ‘মুসলমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাতের ক্ষতি থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বোখারি, হাদিস: ১০)
অন্য হাদিসে এরশাদ হয়েছে, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর না জুলুম করতে, না তাকে অসহায় অবস্থায় পরিত্যাগ করতে পারে এবং না তাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে পারে। কোনো লোকের নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করবে। প্রত্যেক মুসলমানের জীবন, ধনসম্পদ ও মানসম্মান প্রত্যেক মুসলমানের সম্মানের বস্তু। এর ওপর হস্তক্ষেপ করা হারাম।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৭০৬)
বন্ধ হোক র্যাগিংয়ের কুপ্রথা
অতএব, আমাদের ছাত্র-শিক্ষকের কর্তব্য, মানবিকতা পরিপন্থি রীতিনীতিগুলোকে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বর্জন করা। আমরা র্যাগিংয়ের নামে চলতে থাকা অসভ্যতা চাই না। র্যাগিং নামক অপসংস্কৃতিকে সমূলে উৎপাটন করতে হলে সরকারের উচিত কঠোর আইন প্রণয়ন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এ অপরাধে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেই র্যাগিং নামক অপকর্মটি বন্ধ হতে বাধ্য।
‘শুধু পায়ে জুতা, নগ্ন হয়ে বিমানবন্দরে হাজির নারী’
: তিনি কেবল জুতা পায়ে দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা......বিস্তারিত
-
শুধু পায়ে জুতা, নগ্ন হয়ে বিমানবন্দরে হাজির নারী
: তিনি কেবল জুতা পায়ে দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা...
-
নববর্ষের দিনে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড
: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে...
-
চীনে আবারও করোনার থা’বা, নতুন করে আক্রা’ন্ত শতাধিক
: চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘা’তী করোনা ভাইরাস এখন বৈশ্বিক...
-
মারা গেলে বিয়ের পোশাক পরিয়ে দিতে বললেন মিয়া খলিফা
: করোভাইরাসের সং’ক্রমণে টা’লমাটা’ল বিশ্ব। এর মধ্যে নিজের বিয়ের পোশাক নিয়ে...
-
দেশে করোনায় একদিনে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
: মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে আরও ২০৯...
-
ঘাতক আব্দুল মাজেদ সম্পর্কে ভয়ঙ্কর তথ্য জানা গেলো
: বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ ভারতের কলকাতায় দীর্ঘ...
‘শুধু পায়ে জুতা, নগ্ন হয়ে বিমানবন্দরে হাজির নারী’
: তিনি কেবল জুতা পায়ে দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা......বিস্তারিত
‘শুধু পায়ে জুতা, নগ্ন হয়ে বিমানবন্দরে হাজির নারী’
: তিনি কেবল জুতা পায়ে দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা......বিস্তারিত