news | logo

৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে মে, ২০২৪ ইং



বুকভরা অভিমান, রাষ্ট্রীয় সম্মান না নিয়েই চিরবিদায় মুক্তিযোদ্ধার

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৫, ২০১৯, ০৪:১০

বুকভরা অভিমান, রাষ্ট্রীয় সম্মান না নিয়েই চিরবিদায় মুক্তিযোদ্ধার

আগামীর প্রত্যাশা ডেক্সঃ

মৃত্যুর আগে তিনি লিখে গেছেন, ‘যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত করেছে, পেটে লাথি মেরেছে, শেষযাত্রার কফিনে তাদের সালাম, স্যালুট আমি চাই না’

‘তুচ্ছ’ ঘটনায় ছেলে চাকরি হারানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে সুরাহা চাইতে গিয়েছিলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার যোগীবাড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাননি তিনি। তাই মৃত্যুর আগে তার ক্ষোভ ও অভিমান চিঠি আকারে লিখে গেছেন স্বজনদের কাছে।

মৃত্যুর আগে তিনি লিখে গেছেন, “যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত করেছে, পেটে লাথি মেরেছে, শেষযাত্রার কফিনে তাদের সালাম, স্যালুট আমি চাই না।”

ইসমাইল হোসেনের ছেলে নুর ইসলাম বলেন, এলাকার সাংসদ ও হুইপ ইকবালুর রহিমের সুপারিশে ২০১৭ সাল থেকে “নো ওয়ার্ক নো পে”র ভিত্তিতে এসিল্যান্ডের (ভূমি কমিশনার) ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করে আসছিলাম। কিন্তু এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম আমাকে তার পরিবারের কাজ করতে বাধ্য করেন। এরইমধ্যে কিছুদিন আগে এসিল্যান্ডের স্ত্রী আমাকে তার বাসার টয়লেট পরিষ্কার করতে বলেন। আমি অসুস্থ থাকায় পরে করব বললে তিনি আমাকে অকথ্য ভায়ায় গালিগালাজ করেন। এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম বাসায় এলে তার কাছেও তিনি আমার নামে নালিশ করেন। এ ঘটনায় এসিল্যান্ডও আমাকে গালাগাল করে সরকারি বাসা ৩ ঘন্টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। বাসা ছাড়তে দেরি হওয়ায় তিনি লোকজন নিয়ে গিয়ে তালা ভেঙ্গে আমার যাবতীয় মালামাল নষ্ট করে দেন। এ বিষয়ে আমার বাবা ডিসি স্যারের সাথে দেখা করতে গিয়েও তার সাক্ষাত পাননি।

পরে গত ২১ অক্টোবর শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে  দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ইসমাইল হোসেন। ২৩ অক্টোবর সকাল ১১টা ১০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

মৃত্যুর আগে ইসমাইল হোসেন তার ভাইয়ের ছেলেকে দিয়ে স্বজনদের উদ্দেশে দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি বলেন, “প্রশাসন কোন লাভ এবং লোভের আশায় ঠুনকো কারণ দেখিয়ে আমার ছেলেকে চাকরি ও বাস্তুচ্যুত করল? ছেলে চাকরিচ্যুত হওয়ায় আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এই অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়, তাহলে আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়। কারণ এসি ল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত করেছে, পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম-স্যালুট আমার শেষযাত্রার কফিনে আমি চাই না।”

চিঠি লেখা শেষ হলে তিনি চিঠিটি হুইপ ইকবালুর রহিমের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তার মৃত্যুর পর যেন তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা না হয়, সে বিষয়েও পরিবারকে নির্দেশনা দেন। ২৩ অক্টোবর ইসমাইল হোসেনের মৃত্যুর পর উপজেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মহসীন উদ্দিনের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা তাকে গার্ড অব অনার দিতে যান। কিন্তু ইসমাইলের পরিবারের সদস্যরা তাতে বাধা দেন। পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়।

সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লোকমান হাকীম আক্ষেপ করে বলেন, “তার ছেলে চাকুরিচ্যুত করা এবং তার পরিবারের সাথে এ ধরনের আচরণ কাম্য হতে পারে না।” তিনি পুরো ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।”

উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার প্রতিবেশী মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, “প্রশাসনের এহেন কার্যকলাপে জাতি বিস্মিত হয়েছে। যারা বুকের রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের সাথে নির্মম ও অমানবিক আচরণ কখনোই কাম্য নয়।”

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ভূমি কমিশনার মো. আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক তার মোবাইলে ফোন করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মাহামুদুল আলম গণমাধ্যমকে  বলেন, “অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট মো. শরিফকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই ব্যাবস্থা নেওয়া হবে “

তিনি আরো বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্য সন্তান। তারা দেশ স্বাধীন না করলে আমি ডিসি হতে পারতাম না। মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।”




সম্পাদক ও প্রকাশক : মি. আহমেদ

অফিস লোকেশন:

১১০, গোয়ালবাড়ী, কাফরুল

মিরপুর-১৪, ঢাকা-১২০৬।

ফোন: ০১৯২২২৭৭৭৪৭ নিউজরুম: ০১৯২২২৭৭৭৩২

ই-মেইল: sales@bdwebs.com