news | logo

৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং



ফরিদপুর পৌরসভায় মিলছে না পানি, বাড়তি বিলে ক্ষুব্ধ সাধারণ গ্রাহক

প্রকাশিত : জুন ২০, ২০১৯, ১৭:৪৬

ফরিদপুর পৌরসভায় মিলছে না পানি, বাড়তি বিলে ক্ষুব্ধ সাধারণ গ্রাহক

প্রত্যাশা ডেক্সঃ ফরিদপুর পৌরসভার সিংহভাগ এলাকার বাসিন্দাগণ পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি পান না বলে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। এখানকার জনগণকে পানির সংস্থানে নিদারুণ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই যখন পরিস্থিতি তখন পৌর কর্তৃপক্ষ পানির সংকট নিরসণে কোন উপায় বের করতে না পারলেও নাগরিকদের উপর পাল্টা পানির বিল বাড়িয়ে মড়ার উপর যেনো খাড়ার ঘাঁ বসাচ্ছে।

ফরিদপুর পৌরসভার ২০১৯-২০ সালের নিজস্ব বাজেট ঘোষণার আগেই পৌরসভার পানির বিল কাড়ানো হয়েছে শতকরা ৯৬ ভাগ পর্যন্ত। এর ফলে জনমনে তিব্র ক্ষোভ ও বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তবে মেয়র দাবি করেছেন, আর্থিক ঘাটতি পূরণে পানির দাম বাড়ানোর কোন বিকল্প ছিল না।
ফরিদপুর পৌরসভা ইতিমধ্যে শহরে মাইকিং করে পানির বিল বৃদ্ধির এ ঘোষনা জানিয়ে দিয়েছে। গত মে মাস থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। ফরিদপুর পৌরসভা বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পানি সরবরাহ করতে পারে। পানির মাসিক বিল পরিশোধ করার পরেও কাঙ্খিত পানি না পাওয়ায় এসব গ্রাহকদেরকে বাড়ির আশেপাশের নলকূপ, গভীর নলকূপ, পুকুর, লেক ও নদীর পানির উপর নির্ভর করতে হয়। আর খাবার পানি হিসেবে এই পানি সরাসরি ব্যবহার করাটাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাতে পানিবাহিত অনেক রোগের জীবানু ভাসমান থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বর্তমানে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত এ মডেল পৌরসভার পানির গ্রাহক রয়েছে ৮ আট হাজার ৫৮৫জন। গ্রাহকদের পরিপূর্ণ পানির চাহিদা মেটাতে দৈনিক প্রয়োজন এক কোটি লিটার পানি। সেখানে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পানি সরবরাহ করা হয়।

পাইপের মাপ অনুযায়ী ছয় ধরণের লাইনের মাধ্যমে পৌরবাসীকে বর্তমানে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এর প্রতিটিরই বিলের হার বাড়ানো হয়েছে। এ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৯৫ দশমিক ৬৫ ভাগ থেকে সর্বনি¤œ ৩৩ দশমিক ৩৩ ভাগ পর্যন্ত।

আধা ইঞ্চি পাইপে সরবরাহ পানি লাইনের জন্য গ্রাহকদের প্রতিমাসে বিল দিতে হতো ১৫০ টাকা। শুরুতে এর পরিমাণ ছিলো মাত্র ৫০ টাকা। নতুন করে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৭৫ টাকা। আর কোয়ার্টার ইঞ্চির ২২৫ টাকার পানির বিল করা হয়েছে ৩৭৫ টাকা। একইভাবে এক ইঞ্চির মাসিক বিল এক হাজার ১৫০টাকা থেকে দুই হাজার ২৫০টাকা, দেড় ইঞ্চির বিল ছিল চার হাজার ৫০০টাকা থেকে সাত হাজার টাকা, দুই ইঞ্চি পাইপের বিল সিাত হাজার ৫০০টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা এবং তিন ইঞ্চি পাইপের বিল ২২ হাজার ৫০০টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

এরমধ্যে বাসাবাড়িতে সংযোগ নেয়া আধা ইঞ্চি, কোয়াটার ইঞ্চি ও এক ইঞ্চির পাইপ ব্যবহারকারীদের পানির বিলই বাড়ানো হয়েছে বেশি। এ তিনটি ক্যাটাগরিতে বিল বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৮৩ দশমিক ৩৩, ৬৬ দশমিক ৬৬ এবং ৯৫ দশমিক ৬৫ ভাগ।

আকস্মিক এবং নিজস্ব বাজেট ঘোষনার আগে পৌরসভার পানির বিল বৃদ্ধির ঘটনায় জনমনে বিরুপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, পানি সরবরাহ করতে না পারলেও পানির বিল বাড়ানো হযেছে। সেবার নামে এটা একধরণের জোরজবরদস্তি।

শহরের ঝিলটুলী মহল্লার বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন, পানির বিল বৃদ্ধি সংক্রান্ত পৌরসভার এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, অমানবিক এবং খামখেয়ালীপনার নামান্তর। পৌরসভা ভোক্তার কোন কথা শোনে না, কোন আপিলই গ্রহণ করে না তারা।

শহরের ব্রাহ্ম সমাজ সড়ক এলাকার বাসিন্দা আহমেদ ফিরোজ বলেন, পৌরসভার উচিত মিটার সিস্টেম করা। সরবারহকৃত পানির মান নি¤œমানের ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এই পানি সরবরাহ করে মানুষের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বিল নেওয়া হয়।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি রমেন্দ্রনাথ রায় কর্মকার বলেন, ফরিদপুর পৌসভার সরবরাহকরা পানির মান খারাপ এবং

আয়রণযুক্ত। পানি সরবরাহ ঠিকমত পাওয়া যায় না। এব্যাপারে পৌরসভায় বলেও কোন সমাধান মেলেনি। ‘পৌরসভা তাদের সেবার মান উন্নত করুক’-পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ গ্রেড ও মডেল পৌরসভা হতে

হয় কাজে-কর্মে, খাতা-কলমে নয়। এক ইঞ্চি পাইপ পর্যন্ত পানির বিল স্বাভাবিক মাত্রার থাকা উচিত। যেহেতু প্রান্তিক জনগোষ্ঠি এ পানি ব্যবহার করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেবা পাবো না, অথচ টাকা দিয়ে যাবো, এভাবে চলে না। সাধারণত জনগুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যের মূল্য সহজে বাড়ানো হয় না। কিন্তু এখানে পানির মতো মৌলিক চাহিদার অপরিহার্য ও জনগুরুত্বপূর্ণ জিনিষের দাম বাড়ানো হয়েছে।

ফরিদপুর পৌরসভার পানি সরবরাহের দায়িত্বরত প্রকৌশলী মোস্তফা ইকবাল বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পৌরসভার টাউন লেভেল কর্ডিয়নেশন কমিটি

(টিএলসিসি) এর মাসিক সভায় পানি বৃদ্ধির এ প্রস্তাব পাশ হয়। ওই সভাতেই সিদ্ধান্ত হয় আগামী মে মাস থেকে নতুন এ হার কার্যকর হবে।

ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেথু পানির বিলের বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, পানির সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিমাসে ফরিদপুর পৌরসভাকে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়। এ গচ্চা কমিয়ে আনার জন্য পৌরবাসীদের পানির বিল বাড়ানো ছাড়া বিকল্প কোন উপায় ছিল না। তিনি বলেন, টাকার এ ঘাটতি পূরণ করা না গেলে পানি সরবরাহ নির্বিঘœ করাও সম্ভব নয়। এ জন্যই পানির বিল বাড়াতে হয়েছে।




সম্পাদক ও প্রকাশক : মি. আহমেদ

অফিস লোকেশন:

১১০, গোয়ালবাড়ী, কাফরুল

মিরপুর-১৪, ঢাকা-১২০৬।

ফোন: ০১৯২২২৭৭৭৪৭ নিউজরুম: ০১৯২২২৭৭৭৩২

ই-মেইল: sales@bdwebs.com