news | logo

৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং



পদ্মা তীর রক্ষাবাঁধ: ৪০ বছর পর দাবি পূরন হচ্ছে চরভদ্রাসন উপজেলার লাখো মানুষের

প্রকাশিত : জুন ২৬, ২০১৯, ০৬:২২

পদ্মা তীর রক্ষাবাঁধ: ৪০ বছর পর দাবি পূরন হচ্ছে চরভদ্রাসন উপজেলার লাখো মানুষের

প্রত্যাশা ডেক্সঃ
নদীর একূল ভাঙ্গে, ওকূল গড়ে- এই তো নদীর খেলা। জনপ্রিয় গানটি বছরে পর বছর নদী ভাঙ্গনের শিকার মানুষ গুলোর শুধুই শান্তনার বানী। বাস্তব জীবনে ভাঙ্গনে শেষ সম্বল হারিয়ে অসহায় মানুষ গুলো নিঃস্ব হয়েছে। পদ্মার কড়াল গ্রাসে গত ৪০ বছরে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার ৩টি ইউনিয়ের ৩০টি গ্রামের লাখো মানুষ ভিটে বাড়ি হারিয়েছে। মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চরভদ্রাসনের পুরো উপজেলার মানুষ।
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পালা এবার বুঝি শেষ হতে যাচ্ছে। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙ্গন কবলিত এমপিডাঙ্গী, চরহাজীগঞ্জ ও চরহোসেনপুরের সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে প্রাথমিক প্রটেকশনের কাজ শুরু হয়েছে। আর তাতেই আশায় বুক বেঁধেছে উপজেলাবাসী।

এমপি ডাঙ্গীর জরিনা বেগম জানান, গত ১০/১২ বছরের ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন আমার ঘর ধরে গেছে। এবছর যদি ভাঙ্গন ঠেকানো না যায় তায় মরে যাবো। আমার সব শেষ হয়ে যাবে। আমরা পোলাপান নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। ভাঙ্গন রোধে সরকারি উদ্যোগকে প্রশংসা করেন তিনি বলেন, ভাবছিলাম এবার ভিটে বাড়ি ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যে কাজ হইতেছে তাতে আশা করতেছি রক্ষা পাবো।

শেখ হারুন বলেন, গত ৩০ বছরে ২/৩ বার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছি। এবার ভাঙ্গলে আর যাওয়ার কোন জায়গা নাই। অনেকদিন পর হলেও সরকার যে কাজের উদ্যোগ নিয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জনাই। তবে যে কাজ হইতেছে তা যেন সঠিকভাবে কারে তার দাবি জানাই।
শেখ সামছুল ইসলাম জানান, মানুষের ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আর কিছু নাই। স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তা, ঘাট সবই গেছে। গতবার ফরিদপুর জেলা শহরের সাথে যোগাযোগের রাস্তার অংশ ভেঙ্গেছে। যদি এবার কাজ না করা হতো তবে শহরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতো।

তিনি বলেন, এই যে কাজ হচ্ছে তা এই উপজেলাবাসীর আন্দোলনের ফসল। উপজেলার মানুষ বার বার দাবি তোলায় স্থানীয় সংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন এগিয়ে এসে এই প্রকল্পের ব্যবস্থা করেছেন দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওবায়দুল বারী দিপু বলেন, গত কয়েক বছরের ভাঙ্গনে ৩/৪ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। চলমান এই কাজের ফলে এই এলাকার মানুষ তাদের ভিটে মাটি রক্ষা পাবে।

কাজের মান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় কাজ ভাল হচ্ছে। কারন কেন্দ্রিয় ভাবে ট্রান্সফোর্স টিম গঠন করে কাজ তদারকি করা হচ্ছে। প্রতি সাতদিন পর পর নতুন প্রকৌশলী আসছেন এবং কাজের মান পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন।

চলতি সপ্তাহে কাজের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত ট্রান্সফোর্স সদস্য প্রকৌশলী শাহ মমিনুল ইসলাম মমিন বলেন, বালুর কোয়েলিটি, বালুর ওজন, ডাপিং এর সংখ্যা, ডাপিং এর স্থান এগুলো তদারকি করছি। নিজে দাড়িয়ে থেকে ডাপিং করাচ্ছি। কোন সমস্যা মনে করলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি ভুল ডাপিং হয় সে বস্তা হিসেব থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছি। আবার কোন বস্তার ওজনে কম পেলে তাও বাদ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, দুই বছর মেয়াদে ৭টি গ্রুপে ৩টি ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান ডলি কনষ্ট্রাকসন, আমিন এন্ড কোং ও খন্দকার শাহীন লিঃ কাজ করছে। একাজের প্রাকূল্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কাজের প্রথম পর্যায়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ডাপিং করা হবে। পরবর্তিতে শুকনো মৌসুমে সিসি বল্ক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মান করা হবে।
তিনি বলেন, ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল এই বাঁধ নির্মান। তারই প্রেক্ষিতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কাজটি পরিপূর্ন বাস্তবায়ন হলে চরভদ্রাসন উপজেলার প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।




সম্পাদক ও প্রকাশক : মি. আহমেদ

অফিস লোকেশন:

১১০, গোয়ালবাড়ী, কাফরুল

মিরপুর-১৪, ঢাকা-১২০৬।

ফোন: ০১৯২২২৭৭৭৪৭ নিউজরুম: ০১৯২২২৭৭৭৩২

ই-মেইল: sales@bdwebs.com