news | logo

৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং



এরশাদ উপাখ্যান (১৯৩০-২০১৯)

প্রকাশিত : জুলাই ১৬, ২০১৯, ০৬:০২

এরশাদ উপাখ্যান (১৯৩০-২০১৯)

প্রত্যাশা ডেক্সঃ

রবিবার (১৪.০৭.২০১৯) রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। রংপুরের একটি স্থানীয় স্কুল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এবং কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ১৯৬০ সাল থেকে ৬২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এরশাদ।

তিনি ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটায় অবস্থিত আর্মি স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৮ সালে শিয়ালকোট সেনানিবাসের ৫৪তম ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর হিসেবে দায়িত্ব পান। কর্মদক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনের পুরস্কারস্বরূপ ১৯৬৯ সালে পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন। একইবছর (১৯৬৯-৭০) তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ১৯৭১ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময়ে এরশাদ ছুটিতে তার নিজ জেলা রংপুরে অবস্থান করছিলেন। এসময় জরুরিভিত্তিতে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে ডেকে পাঠানো হয়। এসময় তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে গেলেই তাকে কারাবন্দি হন তিনি।

সিমলা চুক্তির (২৮ জুন হতে ২ জুলাই ১৯৭২) মাধ্যমে ১৯৭৩ কারামুক্তি লাভের পর ওই বছরেই দেশে ফিরে আসেন এরশাদ। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭৩ সালেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ পান। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর কর্নেল পদে এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালের জুন মাসে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন এরশাদ।

১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে প্রতিরক্ষা কোর্সে থাকাকালে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি ও উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ এরশাদ।

এরইমধ্যে ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলে তিনি বাংলাদেশের দিল্লি মিশনের মাধ্যমে দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা জানান।

পরবর্তীকালে, মেজর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদ সেনাপ্রধান ও ১৯৭৯ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

এরশাদ সেনাপ্রধান থাকাকালে ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সেনা অভুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর এরশাদ রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

পরবর্তীকালে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সংবিধান রহিত, জাতীয় সংসদ বাতিল এবং সাত্তারের মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করেন। এসময় তিনি নিজেকে সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক দেশ পরিচালনা করলেও ১১ ডিসেম্বর নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন।

পরবর্তী সময়ে এরশাদ তার রাজনীতির বেসামরিকীকরণের জন্য ১৯৮৩ সালের ২৭ নভেম্বর জনদল গঠন এবং ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় জাতীয় পার্টি গঠন করেন। দলের চেয়ারম্যান হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবগঠিত জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসনে বিজয়ী হয়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা আন্দোলন শুরু করলে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন তিনি। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ নির্বাচনও বর্জন করে এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু করে।

এর আগে, ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বেসামরিক রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এরশাদ।

এদিকে নির্বাচনে কারচুপি, দুঃশাসন, সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী আইন পাশ করে সামরিক রাজনীতির বৈধতা প্রদান প্রভৃতি কারণে বিরোধীদলগুলোর এরশাদবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়। একপর্যায়ে প্রবল গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

দুর্নীতি, দুঃশাসন, নির্যাতনের অভিযোগে বিএনপির করা কয়েকটি মামলায় ১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার ও দণ্ডিত হন।দীর্ঘ ছয়বছর কারাবাসের পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। ২০০০ সালে জাতীয় পার্টি তিনটি উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির একটি অংশের সভাপতি ছিলেন।

এর আগে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সাথে মহাজোট গঠন করেন এরশাদ। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৭টি আসন পেয়ে তৃতীয় বৃহত্তম বিরোধীদলের মর্যাদা লাভ করে এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।

পরবর্তীতে, ২০১৪ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী পদমর্যাদায় এইচ এম এরশাদকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ, ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।




সম্পাদক ও প্রকাশক : মি. আহমেদ

অফিস লোকেশন:

১১০, গোয়ালবাড়ী, কাফরুল

মিরপুর-১৪, ঢাকা-১২০৬।

ফোন: ০১৯২২২৭৭৭৪৭ নিউজরুম: ০১৯২২২৭৭৭৩২

ই-মেইল: sales@bdwebs.com