news | logo

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং



আইসিসি’র দুর্নীতি বিরোধী নীতিমালা তিনবার লঙ্ঘন, সাকিব এক বছর নিষিদ্ধ, সঙ্গে এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত : অক্টোবর ৩০, ২০১৯, ০০:০২

আইসিসি’র দুর্নীতি বিরোধী নীতিমালা তিনবার লঙ্ঘন, সাকিব এক বছর নিষিদ্ধ, সঙ্গে এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা

আগামীর প্রত্যাশা স্পোর্টস ডেক্সঃ    

দিনভর গুঞ্জন ও গুজবের পর সন্ধ্যায় এলো সেই অমোঘ ঘোষণা, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভিতই নাড়িয়ে দিল। জুয়াড়িদের কাছ থেকে তিনবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার পর তা গোপন করার অপরাধে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের টেস্ট ও টি ২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে মঙ্গলবার দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি।

তবে সাকিব দোষ স্বীকার করে নেয়ায় এক বছরের শাস্তি স্থগিত থাকবে। অর্থাৎ, সাকিবের মূল নিষেধাজ্ঞা এক বছর। নিষেধাজ্ঞার সময় শাস্তির সব বিধিবিধান মেনে চললে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন এই দেশসেরা ক্রিকেটার। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালা তিনবার লঙ্ঘনের অপরাধে সাকিবকে এই শাস্তি দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা।

আইসিসির দুর্নীতি ইউনিটের কাছে জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য না জানানোর অপরাধ ও শাস্তি মেনে নেয়ায় আপিল করার সুযোগ থাকছে না সাকিবের। ফলে আগামী বছর অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া টি ২০ বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না তার।

প্রথম এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটানোর সময় নতুন করে কোনো আইন না ভাঙলে পরবর্তী এক বছরের শাস্তি থেকে তিনি রেহাই পাবেন। চরম এই দুঃসময়ে সাকিবের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সাকিব ভুল করলেও বুঝতে পেরেছে। বিসিবি তার পাশে আছে, থাকবে।’ সন্ধ্যায় আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর রাতে বিসিবি কার্যালয়ে এসে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে দেখা করার পর নিজের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাকিব জানান, ‘সবসময়ের মতো সবাই পাশে থাকলে আরও শক্তভাবে ফিরে আসব আমি।’

এদিকে সাকিবের ওপর নিষেধাজ্ঞার খঞ্জ নেমে আসায় কাল রাতেই ভারত সফরের জন্য নতুন অধিনায়ক বেছে নিয়েছে বিসিবি। ভারত সফরে টি ২০ সিরিজে মাহমুদউল্লাহ ও টেস্ট সিরিজে মুমিনুল হক নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ দলকে। আজ ভারত সফরে যাবে বাংলাদেশ টি ২০ দল।

ভারত সফরে প্রথমবারের মতো ডে-নাইট টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই রোমাঞ্চ স্পর্শ করতে পারছে না কাউকে। সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় স্তম্ভিত গোটা দেশ। ভারত সফরের ঠিক আগে আইসিসি শাস্তি ঘোষণা করায় অনেকেই এর মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পেয়েছেন। তবে সাকিব সব দায় স্বীকার করে নিয়েছেন।

জুয়াড়িদের কাছ থেকে একাধিকবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও আইসিসি বা বোর্ডকে না জানানো ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার দুর্নীতি আইনে একটি মারাত্মক অপরাধ। আইসিসির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসের মধ্যে তিনবার সাকিবের কাছে ম্যাচ পাতানো বা ম্যাচ সংক্রান্ত গোপন তথ্য প্রদানের প্রস্তাব আসে। কোনোবারই আইসিসিকে এ বিষয়ে জানাননি এ অলরাউন্ডার।

২০১৭ সালের নভেম্বরে বিপিএল চলাকালীন সাকিবের পরিচিত একজনের কাছ থেকে তার মোবাইল নম্বর নিয়েছিলেন ভারতীয় জুয়াড়ি দিপক আগারওয়াল। এরপর এই জুয়াড়ির সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ হয়েছে সাকিবের। ম্যাচ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য চেয়ে সাকিবকে লোভনীয় টোপ দেন আগারওয়াল। তাতে সাড়া না দিলেও পুরো ব্যাপারটি গোপন রেখেছিলেন সাকিব।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ চলাকালে প্রথম ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। পরবর্তী সময়ে ওই বছরেরই আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ-কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ম্যাচের আগেও তাকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন জুয়াড়িরা।

আরেকবার তার কাছে প্রস্তাব আসে ত্রিদেশীয় সিরিজ অথবা আইপিএল নিয়ে। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ধারা অনুযায়ী, কারও কাছ থেকে অনৈতিক কিছুর প্রস্তাব পেলে যত দ্রুত সম্ভব আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হয়। প্রতিটি সিরিজের আগে ক্রিকেটারদের ক্লাস নিয়ে এ নিয়ম মনে করিয়ে দেয়া হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী, এই ধারা ভঙ্গের শাস্তি সর্ব নিম্ন ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা।

সাকিবের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে আইসিসির মহাব্যবস্থাপক অ্যালেক্স মার্শাল বলেন, ‘সাকিব আল হাসান খুবই অভিজ্ঞ একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। সে আইসিসির অনেক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে এবং ধারা অনুযায়ী বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে অবগত আছে।

ফিক্সিংয়ের প্রতিটি প্রস্তাবই তার জানানো উচিত ছিল। সাকিব তার ভুল স্বীকার করেছে এবং তদন্তে পুরোপুরি সহায়তা করেছে। ইন্টেগ্রিটি ইউনিটকে ভবিষ্যৎ শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে সে, যাতে করে তরুণ ক্রিকেটাররা তার ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। আমি তার কাছ থেকে এই আশ্বাস পেয়ে খুশি।’

এ বছরের শুরুতে এ নিয়ে আইসিসির তদন্তে সহযোগিতা করায় সর্বোচ্চ শাস্তি এড়াতে পেরেছেন সাকিব। নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে নিজের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাকিব জানান, ‘যে খেলাটাকে আমি ভালোবাসি, সেটা থেকে নিষিদ্ধ হওয়ায় আমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি।

তবে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবের বিষয় না জানানোর কারণে আমাকে দেয়া নিষেধাজ্ঞা আমি পুরোপুরিভাবে মেনে নিচ্ছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুখ্য ভূমিকা পালনে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট খেলোয়াড়দের ওপর আস্থা রাখে এবং এই ক্ষেত্রে আমি আমার দায়িত্ব পালন করিনি।

বেশির ভাগ খেলোয়াড় এবং ভক্তদের মতো আমিও ক্রিকেটকে একটা দুর্নীতিমুক্ত খেলা হিসেবে পেতে চাই। আমি আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের সঙ্গে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে চাই এবং কোনো তরুণ ক্রিকেটার যেন আমার মতো ভুল না করে, সেটা নিশ্চিত করতে চাই।’




সম্পাদক ও প্রকাশক : মি. আহমেদ

অফিস লোকেশন:

১১০, গোয়ালবাড়ী, কাফরুল

মিরপুর-১৪, ঢাকা-১২০৬।

ফোন: ০১৯২২২৭৭৭৪৭ নিউজরুম: ০১৯২২২৭৭৭৩২

ই-মেইল: sales@bdwebs.com