news | logo

১৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা নভেম্বর, ২০২৪ ইং



কাল জাতীয় সম্মেলন : বড় পরিবর্তন আসছে কৃষক লীগে

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৫, ২০১৯, ০৪:০৪

কাল জাতীয় সম্মেলন : বড় পরিবর্তন আসছে কৃষক লীগে

*কার্যনির্বাহী কমিটি ১১১ থেকে হচ্ছে ১৫১ সদস্যের * যুক্ত হবে নতুন একাধিক সম্পাদকীয় পদ * বাড়ছে জেলা-উপজেলা কমিটির আকার * বিদেশ কমিটির ক্ষেত্রে নিতে হবে অনুমোদন*

আগামীর প্রত্যাশা ডেক্সঃ

আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বেশ কয়েকটি সংগঠনের সম্মেলন দরজায় কড়া নাড়ছে। এর মধ্যে আগামীকাল বুধবার কৃষক লীগের সম্মেলন। আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী এই সংগঠনের এবারের সম্মেলনে গঠনতন্ত্রে ও নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে।

সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানো, নতুন করে ৪-৫টি সম্পাদকীয় পদ সংযোজন, প্রতিটি সম্পাদকীয় পদের সঙ্গে একটি করে সহ-সম্পাদক পদ সৃষ্টি এবং জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির আকার বাড়ানো হচ্ছে।

এছাড়া বিদেশে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও কঠোরতা আনা হচ্ছে। জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে সংগঠনটির গঠনতন্ত্র সংশোধন উপ-কমিটি এসব বিষয় যুক্ত করে গঠনতন্ত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

জানা যায়, কৃষক লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১১১। এটা সংশোধন করে গঠনতন্ত্রের খসড়ায় ১৫১ জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সহ-সভাপতি ১৬ জন থেকে বাড়িয়ে ২১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ জন থেকে ৫ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ জন থেকে বাড়িয়ে ৯ জন করার প্রস্তাব করা রয়েছে।

এছাড়া নতুন যুক্ত হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়া ও যুববিষয়ক সম্পাদক, কৃষিশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, কৃষি উপকরণ বিষয়ক সম্পাদক, কৃষিপণ্য পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক পদ। আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০টি বিভাগীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে একটি করে সহ-সম্পাদকের পদ ছাড়াও প্রস্তুাবিত সব বিভাগীয় সম্পাদকের সঙ্গে সহ-সম্পাদক রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

জেলা-উপজেলা কমিটির আকারও বৃদ্ধির প্রস্তাব দেবে গঠনতন্ত্র উপ-কমিটি। বর্তমান জেলা কমিটি ৮১ জন বিশিষ্ট, যা ৯১ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রস্তাব থাকছে। উপজেলা কমিটি ৭১ জনের স্থলে ৮১ জন, ইউনিয়ন বা সমমর্যাদার কমিটি ৬১ জনের স্থলে ৭১ জন এবং ওয়ার্ড কমিটি ৫১ জন থেকে বাড়িয়ে ৬১ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।

এছাড়া এবার কয়েকটি সম্পাদকীয় পদের নামের সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হচ্ছে। সমবায় সম্পাদকের স্থলে কৃষি সমবায় সম্পাদক, কুটির শিল্পের স্থলে কৃষি-শিল্প ও বাণিজ্য, মৎস্য ও পশুর স্থলে মৎস্য ও প্রাণী, কৃষিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্থলে কৃষি বিজ্ঞান ও আইটিবিষয়ক সম্পাদক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের স্থলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

কৃষক লীগকে গণমুখী ও গতিশীল করতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হচ্ছে বলে সংগঠনটির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

এদিকে দেশের বাইরে কৃষক লীগের কমিটি দেয়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিদেশে কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা আনা হচ্ছে গঠনতন্ত্রে।

জানতে চাইলে কৃষক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা গণমাধ্যমকে  বলেন, ‘সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কৃষক লীগের গঠনতন্ত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রস্তাব থাকছে। এছাড়া সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদও বাড়ানোর প্রস্তাবনা থাকছে।’

সংগঠনটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্র উপ-কমিটি ৬-৭টা মিটিং করে গঠনতন্ত্র সময়োপযোগী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বাড়ানো এবং বিদেশ কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সাংগঠনিক নেত্রীর (শেখ হাসিনা) অনুমোদনের বিষয় রয়েছে। এখন থেকে বিদেশ কমিটি দেয়ার আগে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনের পরে নেত্রীর অনুমতি নিতে হবে।’

কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের দাবি আদায় এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করছিল সংগঠনটি। কিন্তু বর্তমানে সে ভূমিকা রাখতে পারছে না সংগঠনটি।

গুলশান-বনানীসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকা ও বিদেশে কমিটি করা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে সংগঠনটি।

শীর্ষ পদে আলোচনায় যারা : গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর হওয়ার কথা থাকলেও এবার সাত বছরেরও বেশি সময় পর কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে।

ফলে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা বেশি। বিশেষ করে শীর্ষ দুই পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে নিজ নিজ পক্ষে জোর লবিং-তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন আগ্রহীরা।

ধরনা দিচ্ছেন মূল দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের কাছে। সমর্থকদের নিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শোডাউনও করেছেন কেউ কেউ।

এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রায় দেড় ডজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে।

সংগঠনের বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা আবারও একই পদে থাকতে ইচ্ছুক। সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা সভাপতি পদে আসতে আগ্রহী।

এছাড়া সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন কৃষক লীগের বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু, কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ও শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

এছাড়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. হারুনুর রশীদ হাওলাদারও সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিপ্লব, বিশ্বনাথ সরকার বিটু ও আবুল হোসেনও একই পদ প্রত্যাশা করছেন।

এছাড়া কৃষক লীগের বর্তমান কমিটির আরও কয়েকজন শীর্ষ দুই পদের জন্য ভেতরে ভেতরে লবিং করলেও প্রকাশ্যে প্রার্থিতার কথা বলছেন না।

এদিকে জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুটিতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির আস্থাভাজন ত্যাগী ও দক্ষ নেতাদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কৃষক লীগের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য পদপ্রত্যাশীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা মাধ্যমে আদ্যোপান্ত খোঁজ নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট নেতাদের।

কৃষকের বাড়ির আদলে সাজানো হবে মঞ্চ : ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। এর আগে নভেম্বরজুড়ে হবে দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর জাতীয় সম্মেলন।

এবার খরচ কমাতে একই মঞ্চে সবার সম্মেলনের টার্গেট নিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। তবে মূল মঞ্চটি এক হলেও প্রতিটি সংগঠন তাদের নিজেদের মতো করে মঞ্চের সাজসজ্জা করবে।

আগামীকাল কৃষক লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। ফলে শুরুর দিকে মঞ্চ তৈরির তদারকি করছেন কৃষক লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের এ সহযোগী সংগঠনের এবারের সম্মেলন আকর্ষণীয় করতে মঞ্চ সজ্জায় ভিন্নতা আনা হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ সংলগ্ন লেকের পূর্ব-উত্তর পাশে দক্ষিণমুখী করে ৯০ ফুট বাই ৩০ ফুট মূল মঞ্চের সামনে ৯ ফুট বাই ৪২ ফুট দৈর্ঘ্যরে আরেকটি মঞ্চ করা হচ্ছে।

মঞ্চের ডানপাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বাম পাশে সাংবাদিকের জন্য ৪২ ফুট বাই ২৭ ফুটের আলাদা দুটি মঞ্চ হচ্ছে। মঞ্চের সামনে থাকবে অতিথিদের বসার জায়গা। এরপরই থাকবে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের স্থান।

সেখানে ২০ হাজার পর্যন্ত চেয়ার বসানোর জায়গা থাকবে। মঞ্চ তৈরির তদারকির দায়িত্বে থাকা মোজাম্মেল হক জানান, ৮ অক্টোবর থেকে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। দিনে ৭৫-৮০ জন শ্রমিক কাজ করছে।

জানা গেছে, কৃষক লীগের সম্মেলনের মঞ্চ দেখে মনে হবে কৃষকের বাড়ি। থাকবে ছোট ঘরের উঠানে সবজি গাছ, কৃষক ও কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব জিনিস।

মূল মঞ্চের পাশে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আদলে থাকবে একটি বাড়ি। এছাড়া সবজির বাজারের আদলে থাকবে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের পসরা, দেখে মনে হবে সামনের অতিথিরাই ক্রেতা।

মঞ্চের ডানপাশে কৃষকদের নিয়ে রচিত গান বাজবে। জানতে চাইলে কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র যুগান্তরকে বলেন, এমনভাবে মঞ্চ সাজাতে চাই, যেন মনে হয় নেত্রী (শেখ হাসিনা) কৃষকের কাচারি ঘরে প্রবেশ করে কৃষক সমাবেশ করছেন।

এতে চারুকলার অন্তত ২০ ছাত্র কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।




সম্পাদক ও প্রকাশক : মি. আহমেদ

অফিস লোকেশন:

১১০, গোয়ালবাড়ী, কাফরুল

মিরপুর-১৪, ঢাকা-১২০৬।

ফোন: ০১৯২২২৭৭৭৪৭ নিউজরুম: ০১৯২২২৭৭৭৩২

ই-মেইল: sales@bdwebs.com