news | logo

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং



রোহিঙ্গা শিবিরে চলছে খুন গুম আর নারীদের ইজ্জত হরণ

প্রকাশিত : মার্চ ৩১, ২০১৯, ০৮:৪৫

রোহিঙ্গা শিবিরে চলছে খুন গুম আর নারীদের ইজ্জত হরণ

মিয়ানমারের রাখাইনে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গারা এখন মুখোমুখি হচ্ছেন নতুন নতুন সমস্যার। যারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী এবং স্বদেশে ফেরার জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে নীরবে সচেতনতা সৃষ্টি করছেন তারাই গুমের শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রোহিঙ্গাদের মারামারি, ক্যাম্পে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিদেশী সাংবাদিকদের ওপর হামলাসহ নানা বিশৃঙ্খলায় অশান্ত হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর থেকে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের ৩০টি আশ্রয়শিবিরে। নতুন পুরনো মিলিয়ে ওই ক্যাম্পগুলোতে এখন ১১ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন।

সূত্র মতে, প্রতি ক্যাম্পে একজন করে হেড মাঝির অধীনে চার শতাধিক মাঝির মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা চলছে। ত্রাণতৎপরতাও চালানো হচ্ছে তাদের সহযোগিতায়। তবে বিশাল এই ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ মাঝি ও হেড মাঝিদের হাতে যেমন নেই, তেমনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও এখানে অসহায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গারা জানান, প্রত্যাবাসনবিরোধী তিনটি সন্ত্রাসী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো।
সূত্র জানায়, স্বদেশে ফিরে যেতে আগ্রহী টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গাশিবিরের বি-ব্লকের বি-ওয়ান বস্তির বাসিন্দা মাস্টার দিল মোহাম্মদকে গত ১২ মার্চ রাতে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে গেছে। স্বদেশে ফেরার জন্য তিনি রোহিঙ্গাদের মধ্যে নীরবে সচেতনতা সৃষ্টি করছিলেন। স্বদেশে ফিরতে অনিচ্ছুক সশস্ত্র রোহিঙ্গা দল ওই রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানের মাঝ থেকে তাকে ধরে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ নেই।

দুই সপ্তাহ আগে কুতুপালংশিবিরের লম্বাশিয়া এলাকায় গুম হয়ে যাওয়া হাফেজ শফিকুল ইসলামের (২৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে শিবিরের একটি ল্যাট্রিনের গর্ত থেকে। ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে ১০ দিনের মাথায় অপহৃত একজন রোহিঙ্গা মাদরাসা শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, শিবিরের প্রত্যাবাসনবিরোধী সশস্ত্র রোহিঙ্গা প্রকাশ্য দিবালোকে হাফেজ শফিককে অপহরণ করেছিল। কুতুপালং শিবিরের লম্বাশিয়া দারুসসালাম মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ শফিক মাদরাসায় যাওয়ার পথে অপহৃত হন।

রওজিয়া বেগম নামে একজন রোহিঙ্গা নারী তার স্বামী মৌলভি আবুল হাশেমকে অপহরণের ঘটনা নিয়ে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে উখিয়া থানার পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে। অপর দিকে নুর কামাল নামে আরেক রোহিঙ্গার অপহরণ নিয়েও থানায় মামলা হয়েছে। দুই মামলার বাদিই এখন সন্ত্রাসীদের ভয়ে শিবিরের বাইরে অবস্থান করছেন।

উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গাক্যাম্প ঘুরে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা অনেকেই রাখাইনে স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী। অপর দিকে প্রত্যাবাসনবিরোধী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা নিজেরা যেমনি দেশে ফিরতে চায় না তেমনি দেশে ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদেরও তারা বাধা দিচ্ছে।

সাধারণ রোহিঙ্গারা ভুলক্রমেও পুলিশ বা সেনাসদস্যদের ধারে কাছে যেতে চায় না। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কোনো সদস্য দেখে ফেললে নিশ্চিত খুন বা গুম এমন ভয়েই তারা (সাধারণ রোহিঙ্গারা) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এড়িয়ে চলেন। এমনকি বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটার পরও ক্ষতিগ্রস্ত বা নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিটি পুলিশ ফাঁড়ি বা ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে বিচার চাইতে যেতে পারেন না। সশস্ত্র রোহিঙ্গা দল যখন যেটা চায় সেটাই তাদের কাছে সাধারণ রোহিঙ্গারা পৌঁছে দিতে বাধ্য।




সম্পাদক ও প্রকাশক : মি. আহমেদ

অফিস লোকেশন:

১১০, গোয়ালবাড়ী, কাফরুল

মিরপুর-১৪, ঢাকা-১২০৬।

ফোন: ০১৯২২২৭৭৭৪৭ নিউজরুম: ০১৯২২২৭৭৭৩২

ই-মেইল: sales@bdwebs.com