ডেক্স রিপোর্টঃ
ঘাটে ঘাটে দুর্নীতি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) অধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে। নতুন সংযোগ থেকে শুরু করে মিটার স্থাপন, বিদ্যুতের খুঁটি সরানো, ট্রান্সফরমার পরিবর্তনসহ প্রতিটি সেবার জন্য গ্রাহকদের ঘুষ গুনতে হচ্ছে।
ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারী, লাইনম্যান ও ঠিকাদার থেকে শুরু করে টপ টু বটম সবাই ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত। তাদের সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা স্থানীয় দালাল।
বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। রহস্যজনক কারণে এসব বিষয় দেখেও না দেখার ভান করছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন।
অভিযোগ আছে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ জানালেও তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন না। উল্টো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই ভালো ভালো সমিতিতে পোস্টিং পাচ্ছেন।আরইবি কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করলেও তারা দায়ী করছে ঠিকাদার ও স্থানীয় দালালদের। তাদের দাবি- নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় দালালদের অভিযোগ- শীর্ষ কর্মকর্তাদের টার্গেট সম্পন্ন করতে তাদের দুর্নীতি করতে হচ্ছে।
যখন যে কর্মকর্তা সমিতিতে আসেন তাকে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসোহারা দিতে হয়। মাসোহারা না দিলে তারা কাজ পান না। অপরদিকে সমিতির কর্মকর্তাদের অভিযোগ- তারা মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে সমিতিগুলোতে আসেন।
এ ছাড়া সমিতির প্রতিটি প্রকল্প থেকে অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের অর্থ ঘুষ দিতে হয়। অন্যথা এসব প্রকল্পের টাকা ছাড় করা থেকে শুরু করে প্রকল্প পাস করাতে তাদের নানা যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এই টাকা ওঠাতে তারা ঠিকাদার, লাইনম্যান ও দালালদের কাছ থেকে ঘুষ নেন। আর দালালরা ঘুষ নেয় গ্রাহকদের কাছ থেকে।এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদার, পরামর্শকের সঙ্গে স্থানীয় দালালরা এসব কাজে জড়িত। আমরা সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই তদন্ত হয়; প্রমাণিত হলে শাস্তিও হয়। কিন্তু দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়। তাদের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই।
বেশ কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ বিভাগ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে- পল্লী বিদ্যুতের সেবা পেতে ৪০ শতাংশ গ্রাহককে ঘুষ দিতে হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মাঠপর্যায়ের তদন্তেও পল্লী বিদ্যুতে পদে পদে হয়রানি ও ঘুষ-দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, গত দু-তিন বছরে এই দুর্নীতি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছেন আরইবির কোষাগারে।
গ্রামের মানুষজন যাতে বিদ্যুতে কষ্ট না করে সে জন্য তিনি আরইবিতে একের পর এক প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য নতুন নতুন ট্রান্সফরমার দিচ্ছেন। সাব-স্টেশন বসাচ্ছেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রকল্পের বড় বড় ফান্ড নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মিলেমিশে দুর্নীতি করছে- টুপ টু বটম কর্মকর্তা-কর্মচারী। গ্রাহকদের হাজারও অভিযোগ প্রতিনিয়ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে জমা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগেও আসছে নানা অভিযোগ।
আরইবির দুর্নীতি নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতেও পল্লী বিদ্যুতের হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি বারবার উঠে আসছে।এ ঘুষ বাণিজ্যে অসন্তোষ বাড়ছে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যেও। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে- খোদ জনপ্রতিনিধিরাও পল্লী বিদ্যুতের সেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় কর্মীদের অভিযোগ- তাদের বোর্ডের এক শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তি কাউকে পাত্তা দেন না।
নিজে কিছু বোঝেনও না, আবার অন্য কারও কাছ থেকেও বুঝতে চান না। দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ঘোর বিরোধী এই কর্মকর্তার কারণে অনেক সমিতি শিল্পকারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিচ্ছেন না। কথায় কথায় নিজে ‘অমুকের লোক, তমুকের লোক’ পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হুমকি দেন। গ্রাকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া ছাড়া তিনি কোনো সেবা দিতে চান না।
অভিযোগ আছে- গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য নিয়োগকৃত মূল ঠিকাদাররা কাজ করেন না। মূল ঠিকাদার সাব-ঠিকাদার নিয়োগ করে। সাব-ঠিকাদার গ্রামে গ্রামে দালাল নিয়োগ করে। ফলে সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়ে। সরকার বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলেও ঠিকাদারদের সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ মানুষ সুযোগটি পাচ্ছে না।
দুদক হটলাইনে (১০৬) আসা গ্রাহক ভোগান্তি, অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিদিনই পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন সমিতিতে হানা দিচ্ছে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম।
কিছুদিন আগে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এবং দৌলতপুর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অভিযান চালিয়ে দুদক ও ভ্রাম্যমাণ আদালত গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণ করায় এক দালালকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেন। একই অপরাধে দৌলতপুরের আরেক দালালকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন।
ফরিদপুরের জেলা কার্যালয় মধুখালী উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অভিযান চালিয়েও দুদক গ্রাহক সেবা প্রদানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পায়। জানা গেছে, দুদক টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে দালালরা পালিয়ে যায়।
দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে ফুলবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসেও অভিযানকালে গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগ পেয়েছে দুদক। একটি সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগে ব্যাপক অনিয়মের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে ওই টিম।ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাউতনগর গুচ্ছগ্রামের ৩৬০ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে জনপ্রতি সাত হাজার টাকা ঘুষ নেয়া হয়। গ্রাহকরা ২৫ লাখ টাকা তুলে দিলেন স্থানীয় দালাল হুমায়ুন কবির ও আবদুল হালিমের হাতে। স্থানীয়দের অভিযোগ- দুই দালালের মাধ্যমে ওই টাকা তোলেন রানীশংকৈল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (আরইবি) একজন কর্মকর্তা। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সমিতিতে অভিযোগ জানানো হলে নামকাওয়াস্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।
গত তিন বছর থেকে দুদক সরকারের কয়েকটি সেবা খাত নিয়ে মাঠপর্যায়ে গণশুনানির আয়োজন করছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি মানিকগঞ্জের সিংগাইরে অনুষ্ঠিত শুনানিতে জামির্ত্তা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবদুস কুদ্দুস অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পাঁচ বছর আগে উপজেলার কাঞ্চননগর গ্রামের ৫৪ জন গ্রাহকের কাছ থেকে নুরুল ইসলাম নামের এক দালাল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। তবে ওই দালাল মিটারপ্রতি আরও তিন হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা না দেয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ আসার পর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত হয়।
জানা গেছে, বর্তমানে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণে এক হাজার ৩৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে এক হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার প্রকল্প, ঢাকা বিভাগে পল্লী বিদ্যুতের সেবা বাড়াতে এক হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে।
এ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে বিদ্যমান বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৫ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ১৮ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে ২০১২ সাল থেকে আরইবি আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৭০ হাজার পুরনো ও ওভারলোড ট্রান্সফরমার পরিবর্তনের জন্য আরইবি ৭৯৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অভিযোগ আছে- এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে টপ টু বটম ঘুষ দিতে হয়।কিছুদিন আগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আতিউর রহমান আতিক বলেছিলেন, বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের কাজ পাওয়া ঠিকাদার খুঁটি স্থাপন ও বাসাবাড়িতে ওয়্যারিং করানোর জন্য টাকা নিচ্ছে।
পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, তার এলাকায়ও মধ্যস্বত্বভোগীরা নানা অজুহাতে টাকা তুলছে। আরেক সংসদ সদস্য বেগম নাসিমা ফেরদৌসী অভিযোগ করেন, বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্যও টাকা নেয় ঠিকাদাররা।
বৈঠকে উপস্থিত আরইবির চেয়ারম্যানের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এভাবে টাকা নেয়ার কোনো নিয়ম নেই। পরে সংসদীয় কমিটি দুর্নীতি ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সমিতিগুলোতে কিছুদিন একটু নড়াছড়া হলেও পরবর্তী সময়ে আবারও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে।
‘শুধু পায়ে জুতা, নগ্ন হয়ে বিমানবন্দরে হাজির নারী’
: তিনি কেবল জুতা পায়ে দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা......বিস্তারিত
-
শুধু পায়ে জুতা, নগ্ন হয়ে বিমানবন্দরে হাজির নারী
: তিনি কেবল জুতা পায়ে দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা...
-
নববর্ষের দিনে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড
: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে...
-
চীনে আবারও করোনার থা’বা, নতুন করে আক্রা’ন্ত শতাধিক
: চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘা’তী করোনা ভাইরাস এখন বৈশ্বিক...
-
মারা গেলে বিয়ের পোশাক পরিয়ে দিতে বললেন মিয়া খলিফা
: করোভাইরাসের সং’ক্রমণে টা’লমাটা’ল বিশ্ব। এর মধ্যে নিজের বিয়ের পোশাক নিয়ে...
-
দেশে করোনায় একদিনে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
: মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে আরও ২০৯...
-
ঘাতক আব্দুল মাজেদ সম্পর্কে ভয়ঙ্কর তথ্য জানা গেলো
: বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ ভারতের কলকাতায় দীর্ঘ...
‘শুধু পায়ে জুতা, নগ্ন হয়ে বিমানবন্দরে হাজির নারী’
: তিনি কেবল জুতা পায়ে দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা......বিস্তারিত
‘শুধু পায়ে জুতা, নগ্ন হয়ে বিমানবন্দরে হাজির নারী’
: তিনি কেবল জুতা পায়ে দিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা......বিস্তারিত